তসলিমা নাসরিন বাংলাদেশের একজন লেখিকা। বিশেষত তাঁর লেখায় ধর্ম, সমাজ ও পুরুষতান্ত্রিক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে ক্ষোভ, হতাশা দেখা যায়; সব কুসংস্কার ও অন্যায় গুড়িয়ে দেয়ার প্রত্যয় ফুটে উঠে। যার কারণে তিনি হয়েছেন আলোচিত, সমালোচিত ও বিতর্কিত। নারীবাদী এই লেখিকাকে তাঁর লেখার কারণে স্বদেশের ঠিকানা হারিয়ে পরবাসী হতে হয়েছে। নিষিদ্ধ হয়েছে তার বেশকিছু বই। তারপরও তাঁর কলম থামেনি, লিখেই চলেছেন।
‘লজ্জা’
লেখক : তসলিমা নাসরিন
প্রকাশকাল : ১৯৯৩ সাল
নিষিদ্ধ ঘোষণা : ১৯৯৩ সাল
বইটি সম্পর্কে : ভারতের বাবরী মসজিদকে ঘিরে বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর ঘটে যাওয়া নৃশংসতা বিষয় নিয়ে এই বইটি রচিত। মৌলবাদীদের আন্দোলনের কাছে নতি স্বীকার করে তৎকালীন সরকার বইটি বাজেয়াপ্ত করে। এরপর মৌলবাদীরা চাপে তসলিমা নাসরিন দেশত্যাগ করতে বাধ্য হন। বাংলাদেশে নিষিদ্ধ হলেও বিশ্বের অনেক ভাষায় ‘লজ্জা’ বইটি অনূদিত হয়েছে। ১৯৯৩ সালে সরকারী এক তথ্যবিবরণীতে বলা হয় যে, জনমনে বিভ্রান্তি ও বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অঙ্গনে বিঘ্ন ঘটানো এবং রাষ্ট্র বিরোধী উসকানিমূলক বক্তব্য প্রকাশিত হওয়ার জন্য ‘লজ্জা’ নামক বইটির সকল সংস্করণ সরকার বাজেয়াপ্ত ঘোষণা করে।
‘আমার মেয়েবেলা’
লেখক : তসলিমা নাসরিন
প্রকাশকাল : ১৯৯৯ সাল
নিষিদ্ধ ঘোষণা : ১৯৯৯ সাল
বইটি সম্পর্কে : ‘আমার মেয়েবেলা’ হচ্ছে তসলিমা নাসরিনের আত্মজীবনীমূলক বই। পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ও রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় একটা মেয়ে কীভাবে প্রতিকূল পরিবেশের ভেতর দিয়ে বেড়ে ওঠে, সেটাই নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে লিখেছেন। নিজের মেয়েবেলায় যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন, সেই কথাও খোলামেলাভাবে বলেছেন। অশ্লীলতা ও ধর্মীয় মূল্যবোধে আঘাতের অভিযোগে বাংলাদেশ সরকার ১৯৯৯ সালে বইটি নিষিদ্ধ করে।
‘উতল হাওয়া’
লেখক : তসলিমা নাসরিন
প্রকাশকাল : ২০০২ সাল
নিষিদ্ধ ঘোষণা : ২০০২ সাল
বইটি সম্পর্কে : ‘আমার মেয়েবেলা’ বইটির দ্বিতীয় খণ্ড হচ্ছে ‘উতল হাওয়া’। এটি পশ্চিমবঙ্গ থেকে প্রকাশিত হয়। ইসলাম বিরোধী তথ্য থাকার অভিযোগে এবং ধর্মীয় সম্প্রীতিতে আঘাত হানতে পারে এমন আশংকায় বাংলাদেশ সরকার ২০০২ সালে বইটি নিষিদ্ধ করে।
‘দ্বি-খণ্ডিত’
লেখক : তসলিমা নাসরিন
প্রকাশকাল : ২০০৩ সাল
নিষিদ্ধ ঘোষণা : ২০০৩ সাল
বইটি সম্পর্কে : বাংলাদেশে ‘ক’ নিষিদ্ধ হওয়ার পর পশ্চিমবঙ্গে সেই বইটি ‘দ্বি-খণ্ডিত’ নামে প্রকাশিত হয়। ইসলাম-বিরোধী বিষয় থাকার অভিযোগে পশ্চিমবঙ্গ সরকারও বইটি নিষিদ্ধ করে।
‘ক’
লেখক : তসলিমা নাসরিন
প্রকাশকাল : ২০০৩ সাল
নিষিদ্ধ ঘোষণা : ২০০৩ সাল
বইটি সম্পর্কে : ‘কথা বলা’-কে ময়মনসিংহের আঞ্চলিক ভাষায় 'ক' বলা হয়। আর এটিকেই লেখিকা বইয়ের শিরোনাম করেছেন, বইটিতে ওঠে এসেছে তাঁর জীবনের না-বলা নানারকম কথা। বইটি প্রকাশিত হওয়ার পর তুমুল আলোচনা ও বিতর্ক সৃষ্টি হয়। বইটিতে তিনি তাঁর ব্যক্তিজীবনের ঘটনাগুলো খোলামেলাভাবে প্রকাশ করেছেন। সৈয়দ শামসুল হক ও ইমদাদুল হক মিলন-সহ বিভিন্ন জনকে জড়িয়ে নিজের জীবনের ঘটনা ব্যক্ত করেন। তাঁদের প্রায় সবাই সেসব অস্বীকার করেন। কবি ও ঔপন্যাসিক সৈয়দ শামসুল হক তসলিমা নাসরিনের বিরুদ্ধে ১০০ কোটি টাকার মানহানি মামলা করেন, যার ফলশ্রুতিতে ‘ক’ বইটি নিষিদ্ধ হয়।
‘সেই সব অন্ধকার’
লেখক : তসলিমা নাসরিন
প্রকাশকাল : ২০০৪ সাল
নিষিদ্ধ ঘোষণা : ২০০৪ সাল
বইটি সম্পর্কে : তসলিমা নাসরিন নিজের আত্মজীবনী নিয়ে 'সেই সব অন্ধকার' বইটি লিখেন। ইসলাম ধর্মের অবমাননা ও হযরত মুহাম্মদ (স:) সম্পর্কে কূটক্তি থাকার অভিযোগে বাংলাদেশ সরকার ২০ ফেব্রুয়ারি ২০০৪ সালে বইটি নিষিদ্ধ করে।